হাবাসের জ্যোতিষীর নাম কী জানেন?
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে প্রশ্নটা এখন নাকি ঘুরপাক খাচ্ছে!
ফুটবল-বিশ্বে কোচেদের মেজাজ, স্টাইল, কথা বলার ধরন, ট্যাকটিক্স নিয়ে প্রচুর কথাবার্তা হয়। কিন্তু জ্যোতিষীর নাম জানতে চাওয়ার তাগিদ বিস্ময়ের পাশাপাশি দমফাটা হাসিরও উদ্রেক করে বইকী!
কৌতুহল বা রসিকতা যা-ই বলুন না কেন, প্রশ্নটার একটা ন্যূনতম ভিত্তি তো আছেই। ভাবুন, প্রথম ম্যাচেই টিমের মার্কি ফুটবলারকে হারিয়ে বসা। তার পর অর্ণব, রিনোদের মতো ইন্ডিয়া টিমের খেলোয়াড়দের সার্ভিস না পাওয়া। বলজিত সাইনির লাল কার্ড। শেষ ম্যাচে প্রথম দলের হাফডজন ফুটবলারের না থাকা।
এত সব ‘ঝড়ে’ও হাবাসের যেন কোনও হেলদোল নেই। ওঁর কাছে প্রতিটা দিনই যেন ‘রেনবো ডে’। এত ঝড়ঝাপ্টার মধ্যেও দু’টো অ্যাওয়ে ম্যাচ থেকে চার পয়েন্ট নিয়ে ফিরেছেন। ঘরের মাঠে কঠিন কেরল ম্যাচ  বের করে এখনও আইএসএল টু-তে অপরাজিত। পয়েন্ট টেবলে সবার আগে।
তবে একজন কোচের দৃষ্টিতে নিজে বলতে পারি, তন্ত্র-মন্ত্র নয়। হাবাসের ঝকঝকে পারফরম্যান্সে রয়েছে ওঁর নিখুঁত অঙ্ক কষে মাঠে নামার কৌশল।  হাবাসের কোচিং দেখে আমি নিজের সঙ্গে অন্তত এক জায়গায় কিছুটা হলেও মিল পাই। গত বছর যখন মোহনবাগানের দায়িত্ব নিয়েছিলাম, প্রথম দিনের প্র্যাক্টিসেই সনিদের ডেকে বলে দিয়েছিলাম, টিমে তোমরা সবাই তারকা। সবাইকেই ম্যারাথন লিগে পুরো তৈরি থাকতে হবে।
ছোট্ট কথাটায় কত বড় কাজ হয় তা জানি। ইউনাইটেড স্পোর্টসে কোচিং করানোর সময় আই লিগে ইয়াকুবু চার ম্যাচ বাইরে ছিল। কিন্তু আমাদের টিমগেম উতরে দিয়েছিল অ্যাওয়ে ম্যাচে। এটিকে-তে হাবাসকেও সেই দলগত সংহতি কাজে লাগাতে দেখে নিজের অভিজ্ঞতার কথা মনে পড়ছে। পস্টিগা না থাকলে ভালদো। জোসেমির চোট হলে তিরি। বলজিৎ কার্ড সমস্যায় বাইরে থাকলে উইংয়ে হুড়মুড়িয়ে অপারেট করতে নাদং— হাবাস যেন জানতেনই, কেরল ডিফেন্সে সৌমিক (দে) গতিতে নাদংয়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে গিয়ে সমস্যায় পড়বে। কাউকে না কাউকে দিয়ে কাজের কাজটা ঠিক করিয়ে নিতে পারছেন হাবাস। কলকাতার স্প্যানিশ কোচের সেই অঙ্কেই অগাস্টিন কখনও সাইডব্যাক। কখনও বা সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার।
এই কলাম লেখা পর্যন্ত আইএসএলে এক ডজন ম্যাচ হয়েছে। মুম্বই এফসি বাদে সব দলই তিনটে বা তার বেশি ম্যাচ খেলে ফেলেছে। যার ভিত্তিতে কলকাতার পাশে পারফরম্যান্সে আমি রাখব গোয়া, দিল্লি, চেন্নাই আর পুণেকে। ভাল লাগছে বিদেশিদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রবিন সিংহ, জেজে, ইসরায়েল গুরুং, অগাস্টিন, আরাতাদের পারফরম্যান্স।
আরাতার কথা যখন উঠলই তখন একটা কথা বলি। হাবাসের অন্যতম তাস এই ছেলেটা ভারতীয় নাগরিকত্ব নিয়ে ‘নীলকণ্ঠ’ হলেও ওর ফুটবলার হয়ে ওঠাটা কিন্তু পুরোপুরি জাপানেই। তাই ওকে খেলানোর অর্থ, প্রতি ম্যাচেই আটলেটিকো কলকাতা একজন অদৃশ্য বিদেশি নিয়ে নামছে। কিন্তু সেই চমকপ্রদ গেমপ্ল্যানের কৃতিত্ব কোচ হাবাসের। এ জন্যই তিনি এগিয়ে। তা ছাড়, ওঁর টিমে বাকি ভারতীয়দের জন্য যে চারটে মাত্র জায়গা পড়ে থাকছে, সেখানে অণর্বদের মধ্যে নিজেদের ছাপিয়ে যাওয়ার প্রবল তাগিদ তো থাকবেই। আর তাতেই বাড়ছে টিমটার লড়াইয়ের স্পিরিট।
শনিবার পুণে ম্যাচেও কি এই অঙ্ক হাবাসকে উতরে দেবে?  স্ট্র্যাটেজি, ট্যাকটিক্স তো থাকবেই। বলজিৎ, নাতো, রিনোরাও টিমে ঢুকছে। কাজেই কঠিন পুণে ম্যাচে টিমের মনোবল আরও বাড়বে। তবে ব্যাক ফোর আর দুই হোল্ডিং মিডিওর মাঝে যে জায়গাটা, সেখানে কিন্তু বিপক্ষকে প্রচুর পাস খেলার জায়গা দিয়ে ফেলছে হাবাসের টিম। আর এরিয়াল বলে মাঝেমাঝে কাঁপুনি ধরছে কলকাতার ডিফেন্সে।
ডেভিড প্লাটের মতো নামী প্রাক্তন ইং‌রেজ ফুটবলার তথা বর্তমানের উঠতি কোচের পুণে সিটি টিমের গতি যদি ইতিবাচক দিক হয়, তা হলে ওদের ডিফেন্স ত্রাসের জায়গা। যার সুযোগ নিয়ে বুধবারই রবিন সিংহ জেটল্যাগ নিয়েও অনায়াসে হেডে গোল করেছে। তেল খাওয়া মেশিনের মতো পরিশ্রমী ইয়ান হিউম, জাভি লারারা ওই ‘সুইট স্পটে’ কামড় বসাতে পারলে পুণেতেও শেষ হাসি হাসতে পারেন হাবাস-ই।