কেউ কাউকে ছেড়ে কথা বলেননি। তবে কূটনীতির লড়াইয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টের থেকে এক কদম এগিয়ে রইলেন রুশ প্রেসিডেন্টই।
সিরিয়া-সঙ্কট, শরণার্থী সমস্যা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় শান্তি ফেরানো— সব বিষয়েই ভ্লাদিমির পুতিন এবং বারাক ওবামার মতপার্থক্য সোমবার প্রকট হয়ে ওঠে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার অধিবেশনে। তার পরেই মঙ্গলবার মুখোমুখি বৈঠকে বসেছেন দুই প্রেসিডেন্ট। এক ঘণ্টার নির্ধারিত বৈঠক গড়িয়ে যায় দেড় ঘণ্টায়। ওবামা বলেন, সিরিয়ায় আইএস-কে ঠেকাতে প্রয়োজন নয়া নেতার।
সোমবারই তিনি বলেছিলেন, সিরিয়া নিয়ে তিনি রাশিয়া এবং ইরানের সঙ্গে কথা বলতে আগ্রহী। রাশিয়া এবং ইরান দু’জনেই সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে সমর্থন করছে। আমেরিকা বাশারের বিরোধী। কিন্তু আইএস-কে ঠেকানোর স্বার্থে আমেরিকা যাতে তার ওই বিরোধিতা থেকে সরে আসে, তার জন্য চাপ বাড়াচ্ছে রাশিয়া। ফ্রান্স ইতিমধ্যেই বিমান হানা শুরু করেছে।
মার্কিন প্রশাসন বরাবরই বলে এসেছে, স্বৈরতন্ত্রী বাশারকে উৎখাত না-করে সিরিয়ায় রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধান খোঁজা বৃথা। কিন্তু পুতিন বিশ্বাস করেন, আইএস জঙ্গিদের প্রতিহত করতে হলে বাশারকে পাশে নিয়েই চলতে হবে। দীর্ঘ দশ বছর পরে রাষ্ট্রপুঞ্জের মঞ্চে ফিরে সোমবার পুতিন এই যুক্তিতেই সরব ছিলেন। রণং দেবি মেজাজে তিনি দাবি করেন, ইরাক থেকে সাদ্দাম হুসেন বা লিবিয়া থেকে মুয়াম্মর গদ্দাফিকে হটানোর পরে সে সব জায়গা জঙ্গিদের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে। সিরিয়ারও সেই পরিণতি কাম্য নয়। পুতিন বলেছেন, ‘‘মার্কিন বা ফরাসি প্রেসিডেন্ট— প্রত্যেকের প্রতি আমার সম্মান রয়েছে। কিন্তু ওঁরা সিরিয়ার নাগরিক নন। তাই আমার মনে হয়, সিরিয়ায় কে নেতৃত্ব দেবেন, সেটা ঠিক করা ওঁদের কাজ নয়।’’
এর জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, ‘‘পুতিনের যুক্তি মানলে বাশারের মতো অত্যাচারী শাসককে সমর্থন করতে হয় আমাদের।’’ সেটাও কতটা কাম্য, প্রশ্ন ওবামার। প্রশ্ন উঠেছে ক্রাইমিয়ায় রুশ আগ্রাসন নিয়েও। উঠেছে ইউক্রেনে লড়াইয়ের কথাও। পুতিনের যদিও দাবি, পশ্চিমি  শক্তির ইন্ধনেই সমস্যা বাড়ছে। এবং সিরিয়ায় রাশিয়ার ভূমিকার কথা বলে তিনি নিজেকেই আইএস-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মুখ হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেন। মার্কিন-বিরোধী শক্তি হিসেবে পরিচিত চিন এবং ইরানও একই কথা বলায় ওবামা কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়েন। নিজের বক্তব্যে অটল থেকেও তাঁকে বলতে হল, সিরিয়া সঙ্কট মেটাতে রাশিয়া, ইরান-সহ সব দেশের সঙ্গেই কথা চালিয়ে যেতে তিনি আগ্রহী।