নৌবাহিনীতে পাকিস্তানকে যোজন যোজন পিছনে ফেলছে ভারত। নতুন রণকৌশলে সাবমেরিনের বহর বাড়ানোয় জোর দেওয়া হয়েছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে গুপ্ত ঘাতকের মতো আচমকা আঘাত হানার ক্ষমতা নিয়ে ভারতীয় নৌ বহরে অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছে এক ঝাঁক নতুন ডুবোজাহাজ। খবর প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের।
ভারতের হাতে এখন সাবমেরিনের মোট সংখ্যা ১৫। পাকিস্তানের হাতে ৫। চিনের সহায়তায় ভারতের সমকক্ষ হতে চাইছে পাকিস্তান। চিন থেকে ৮টি কনভেনশনাল সাবমেরিন বা সাধারণ ডুবোজাহাজ কেনার পথে পা বাড়িয়েছে তারা। তাতেও ভারতের সমকক্ষ হওয়া যাবে না। কারণ ভারতের ভাঁড়ারে শুধু সাধারণ ডুবোজাহাজ নয়, রয়েছে পারমাণবিক শক্তি চালিত  ডুবোজাহাজও। নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য যে পাঁচটি দেশ, সেই দেশগুলি ছাড়া একমাত্র ভারতের হাতেই এই সাবমেরিন রয়েছে। ফলে সংখ্যা বা সক্ষমতা, কোনও দিক থেকেই ভারতের সাবমেরিন বাহিনীর সঙ্গে এঁটে ওঠার জায়গায় নেই পাকিস্তান। তবু হাত গুটিয়ে বসে থাকছে না ভারত। ফ্রান্সের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে আরও ৬টি ডিজেল-ইলেকট্রিক সাবমেরিন। বিশাখাপত্তনমে তৈরি হচ্ছে ভারতীয় প্রযুক্তির পরমাণু শক্তি চালিত আরও একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী ডুবোজাহাজ।
ভারতের নৌ বহরে সাবমেরিন রয়েছে চার ধরনের:
১. সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে নেওয়া সিন্ধুঘোষ শ্রেণির ৯টি ডিজেল-বিদ্যুৎ অ্যাটাক সাবমেরিন।
২. জার্মানি থেকে নেওয়া শিশুমার শ্রেণির ৪টি ডিজেল-বিদ্যুৎ অ্যাটাক সাবমেরিন।
৩. রাশিয়ার কাছ থেকে ১০ বছরের লিজে নেওয়া আকুলা-২ শ্রেণির ১টি পরমাণবিক শক্তি চালিত অ্যাটাক সাবমেরিন।
৪. দেশে তৈরি অরিহন্ত শ্রেণির ১টি পরমাণু শক্তিচালিত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী সাবমেরিন।
ভারতে তৈরি এই শেষোক্ত শ্রেণির ডুবেজাহাজটিই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর। পাকিস্তান শুধু নয়, চিনেরও ঘুম কেড়েছে আইএনএস অরিহন্ত নামে এই পারমাণবিক সাবমেরিন। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে আক্রমণের ক্ষমতা থাকায় আইএনএস অরিহন্ত এক ধাক্কায় ভারতীয় নৌবাহিনীকে পৌঁছে দিয়েছে অভিজাত শ্রেণিতে।
ফ্রান্সের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে যে ৬টি ডুবোজাহাজ ভারত তৈরি করছে, সেগুলি ডিজেল-বিদ্যুৎ অ্যাটাক সাবমেরিন। তবে এই সাবমেরিন ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে আক্রমণ চালাতে সক্ষম। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি এই অ্যাটাক সাবমেরিন অনেক হালকা হওয়ায় প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও দ্রুত হামলা চালাতে সক্ষম। আগামী কয়েক বছরে ধাপে ধাপে এই ডুবোজাহাজগুলি ভারতীয় নৌবাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছে।
বিশাখাপত্তনমে তৈরি হচ্ছে শত্রুপক্ষের শিরদাঁড়ায় শীতল স্রোত খেলিয়ে দেওয়া আর এক কালান্তক ঘাতক। সেটিও অরিহন্ত শ্রেণির ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী পারমাণবিক ডুবোজাহাজ। নাম আইএনএস অরিদমন। ভারতীয় প্রযুক্তিতে নির্মীয়মান এই দ্বিতীয় পারমাণবিক সাবমেরিন আইএনএস অরিহন্তের চেয়েও বেশি ক্ষমতাশালী। অরিহন্তের দ্বিগুণ ক্ষেপণাস্ত্র ধারণের ক্ষমতা থাকবে অরিদমনের।
অন্য দিকে পাক নৌবাহিনী এখনও শুধুমাত্র কনভেনশনাল বা ডিজেল-বিদ্যুৎ অ্যাটাক সাবমেরিনেই পড়ে রয়েছে। চিন থেকে যে ডুবোজাহাজগুলি তারা কিনছে, সেগুলিও ওই একই গোত্রের। ভারতের নৌবাহিনীতে বাড়তে থাকা শক্তিশালী সাবমেরিনের সম্ভার তাই স্বাভাবিক ভাবেই রক্তচাপ বাড়াচ্ছে ইসলামাবাদের।