জাহাজমন্ত্রী নিতিন গডকড়ী জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হুগলি ডক অ্যান্ড পোর্ট ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেড বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে অত্যাধুনিক বার্জ তৈরি করবে। সংস্থার নিয়ন্ত্রণ থাকবে বেসরকারি সংস্থার হাতেই। কারণ সরকারের অংশীদারি ৪৯ শতাংশের কম থাকবে। হাওড়ার সালকিয়া ও নাজিরগঞ্জে ওই সংস্থার দু’টি উৎপাদন কেন্দ্র রয়েছে। সেখানেই অত্যাধুনিক নকশার বার্জ তৈরি হবে। নিতিন বলেন, ‘‘এখন বার্জে ১৫০০ টন পণ্য পরিবহণ করা যায়। অত্যাধুনিক বার্জে ৫ হাজার টন পর্যন্ত পণ্য পরিবহণ করা যাবে। এলএনজি-র মতো প্রাকৃতিক গ্যাসও জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যাবে।’’
গত সপ্তাহেই হুগলি ডক অ্যান্ড পোর্ট ইঞ্জিনিয়ার্স সংস্থার কর্মীদের স্বেচ্ছাবসর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। তিন মাসের জন্য এই ব্যবস্থা চালু থাকবে। এর পরেই বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ওই সংস্থাটি ঢেলে সাজা হবে। গত দু’দিন ধরে বন্দরের আধুনিকীকরণের বিষয়ে কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রকের সঙ্গে বন্দরের চেয়ারম্যানদের বৈঠক হয়েছে। সেখানেই এই বিষয়টি চূড়ান্ত হয়।
কলকাতা বন্দরের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনার পর জাহাজ মন্ত্রকও মনে করছে, ১৫-২০ বছরের মধ্যে কলকাতা-হলদিয়ায় বার্জভিত্তিক পণ্য চলাচলই একমাত্র ভরসা হয়ে উঠবে। সেই কারণেই বার্জ তৈরির কারখানার ভাবনা। হুগলি ডক অ্যান্ড পোর্ট ইঞ্জিনিয়ার্স সংস্থাটি ১৮১৯-এ তৈরি। সত্তরের দশকে এ’টি অ্যান্ড্রু ইয়ুলের পোর্ট ইঞ্জিনিয়ার্স সংস্থার সঙ্গে মিশে যায়। ১৯৮৪-তে এর জাতীয়করণ হয়। নানা রকমের জলযান ও ড্রেজার তৈরি করত সংস্থাটি। এখন অবশ্য এটি লোকসানে চলছে। এ বার এখানেই অত্যাধুনিক বার্জ তৈরি হবে। এখনও রাজ্যে বার্জের ব্যবহার বিশেষ নেই। নতুন কারখানা হলে পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগ বাড়ারও সম্ভাবনা থাকছে।
জাহাজ মন্ত্রকের সিদ্ধান্তে একটি বিষয় স্পষ্ট। তা হল, ‘ট্রান্সলোডিং’ বা নিকটবর্তী মাঝদরিয়ায় পণ্য নামিয়ে বার্জে তা বন্দরে নিয়ে আসাই কলকাতা ও হলদিয়ার বন্দরের ভবিষ্যৎ। সমুদ্রে বা ওড়িশার কণিকা স্যান্ডসে জাহাজ নোঙর করে সেখান থেকে পণ্য নামানো হবে। কারণ কলকাতা ও হলদিয়া বন্দরের নাব্যতার সমস্যার সমাধান করতে পলি তোলা বা ড্রেজিংয়ের কথা আর ভাবতে চাইছে না জাহাজ মন্ত্রক। আজ নিতিন গডকড়ীও জানিয়েছেন, ড্রেজিং করতে গিয়ে বছরে ৪০০ কোটি টাকা যাচ্ছিল। ফলে হলদিয়া বন্দর লোকসানে চলছিল। তার বদলে এখন পণ্য নিয়ে আসার জন্য ইডেন চ্যানেল নামের নতুন পথ খোলা হয়েছে। আগের পথে পণ্য আনতে গেলে অকল্যান্ড ও জেলিংহ্যাম বারে ড্রেজিং করতে হতো। ইডেন চ্যানেলে অকল্যান্ড বারে ড্রেজিংয়ের প্রয়োজন নেই। এর ফলে বছরে ২০০ কোটি টাকা করে সাশ্রয় হবে।
এ ছাড়া হলদিয়ায় রাতে পণ্য পরিবহণের জন্য ‘নাইট নেভিগেশন’ ব্যবস্থাও উন্নত করা হচ্ছে। নিতিন জানান, সাগরে গভীর সমুদ্র বন্দর তৈরির ক্ষেত্রেও উপদেষ্টা নিয়োগ হয়েছে। দ্রুত সমস্যার সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে। বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা করতে জাহাজ মন্ত্রক গুরুত্বপূর্ণ বন্দরগুলিতে ১৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মধ্যে কলকাতায় ১০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ তৈরি হবে।