অবশেষে স্বপ্ন সত্যি হল!
প্রিয় ফুটবলারের সঙ্গে হাত মেলাতে পেরে লাফালাফি আর থামে না সাত বছরের ছোট্ট জায়েদের। সেই সঙ্গে আবার স্পেনের ফুটবল ক্লাবের জার্সি গায়ে খোদ ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর হাত ধরে মাঠে নামা! ম্যাচের ‘ম্যাসকট’ জায়েদের দস্যিপনা দেখে মাঠ ফেটে পড়ে হাততালিতে। ৮১ হাজার দর্শকাসনের ফুটবল স্টেডিয়ামের প্রতিটি ক্যামেরাই তত ক্ষণে ঘুরেছে সিরিয়া থেকে আসা শরণার্থী এই খুদের দিকে!
শুরুটা যদিও সহজ ছিল না। গৃহযুদ্ধে দীর্ণ সিরিয়া থেকে দাদা আর বাবার হাত ধরে ইউরোপে আশ্রয়ের খোঁজে এসেছিল জায়েদ। বিস্তর জটিলতার পরে শেষমেশ ঠাঁই মেলে হাঙ্গেরির আশ্রয় শিবিরে। সেখানেই প্রথম শিরোনামে আসা। জায়েদকে কোলে নিয়ে বাবা ওসামা আব্দুল মোহসেন শিবির থেকে বেরিয়ে ছুটেছিলেন সার্বিয়ার সীমান্তের দিকে। তাঁদের ঠেকাতে ওসামাকে সজোরে লাথি মারেন এক মহিলা চিত্র সাংবাদিক। ইন্টারনেটে সেই ভিডিও ছড়িয়ে পড়তেই রাতারাতি পরিচিতি পায় জায়েদের পরিবার। পরে ক্ষমা চাইলেও চাকরি খোয়াতে হয় ওই চিত্র সাংবাদিককে।
পরিস্থিতি অবশ্য আস্তে আস্তে পাল্টেছে। সিরিয়ার একটি ফুটবল ক্লাবের কোচ ওসামা মোহসেনকে চাকরি দিয়েছে স্পেনের একটি ফুটবল ক্লাব। মিলেছে স্থায়ী ঠিকানাও। গত শনিবার রিয়েল মাদ্রিদের সঙ্গে গ্রানাদার ম্যাচে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয় জায়েদের পরিবারকে। রিয়েল মাদ্রিদের প্রেসিডেন্ট ফ্লোরান্তিনো পেরেজ নিজে সে দিন বিশেষ অতিথিদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন ক্লাবের সব সদস্যের। ঘুরিয়ে দেখান সানতিয়াগো বার্নাবিউ স্টেডিয়াম। দু’দিন আগেই যেখানে দুর্ব্যবহার পেয়েছিলেন সেখানে এমন আপ্যায়নে অভিভূত ওসামা মোহসেন। তাঁর কথায়, ‘‘সিরিয়ায় বসে রিয়েল মাদ্রিদের খেলা দেখাটাই স্বপ্নের মতো লাগত। এখানে এসে সেই স্বপ্ন সত্যি হল।’’
বেজায় খুশি জায়েদের ১৮ বছরের দাদা মহম্মদও। তবে সব চেয়ে আপ্লুত জায়েদ। রোনাল্ডো যে জায়েদের সব চেয়ে পছন্দের ফুটবলার, সে কথা বার বার বলছিলেন ওসামা। তাই মাঠে নেমে একটি বারও স্বপ্নের নায়কের থেকে চোখ সরায়নি জায়েদ। বরং রোনাল্ডোর দেখাদেখি লাফাতে গিয়ে পড়েও গিয়েছিল এক বার। সঙ্গে সঙ্গে হাত বাড়িয়ে দেন রোনাল্ডো নিজেই। উঠে দাঁড়াতে সাহায্য করেন ভক্তকে।
সপ্তাহ খানেক আগে হাঙ্গেরিতে প্রথম ক্যামেরাবন্দি হওয়ার সময়  এই জায়েদকেই হাপুস নয়নে কাঁদতে দেখেছিল সবাই। সাহায্যের হাত তো দূরের কথা, ক্যামেরার সামনেই লাথি মেরে বাবা-ছেলেকে ফেলে দিতেও সঙ্কোচ হয়নি সে দিন।
এখন অবশ্য ছবিটা পাল্টেছে। রোনাল্ডোর হাত ধরতেই ঠোঁটে হাসি ফিরেছে খুদের!